,

নতুন মরণঘাতী নেশা ড্যান্ডিতে আসক্ত হবিগঞ্জের পথশিশুরা

জুয়েল চৌধুরী ॥ নতুন মরণঘাতী নেশা ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে হবিগঞ্জের পথশিশুরা। শহরের পাড়া-মহল্লা, ওলি-গলি, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং খোয়াই নদীর তীরে বসে ড্যান্ডি সেবন করে এসব শিশুরা। জুতা কিংবা ফোমে ব্যবহৃত সলিউশন (আঠা) পলিথিনে ভরে কিছুক্ষণ পরপর মুখের সামনে নিয়ে শ্বাস টেনে নেশা করে তারা। এ নেশা টাকা সংগ্রহসহ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। হবিগঞ্জ শহরের নতুন বাসস্টেন্ড, নতুন স্টেডিয়াম, সদর হাসপাতাল এলাকা, ফৌজাদারী আদালত পাড়া, পুরাতন হাসপাতাল এলাকা, শনিমন্দির এলাকা, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে এলাকা, এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের ট্রাপিক পয়েন্ট-সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টের ঠিক মাঝামাঝি রাস্তার এক পাশে একটি ভ্যান গাড়ি রাখা। সেই গাড়ি ও তার সঙ্গে একটি পিলারে বসে আছে ৪ পথশিশু। প্রত্যেকেরই বয়স ৭-৮ বছর হবে। হাতে পলিথিন ব্যাগ ও তার মধ্যে কি যেন একটা রয়েছে। একটু পরপরই ওই পলিথিনের ব্যাগটি নাকের কাছে নিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করছে অনবরত। একটু কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেই ভয়ে সবাই দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। শহরের নুতুন স্টেডিয়াম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু পথশিশু বসে ঝিমাচ্ছে আর পলিথিন দিয়ে কি যেন করছে। তাদের নাম জিজ্ঞাসা করতেই উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলে, ‘আপনে এখানও কেরে আইছইন। ‘নাম বলতে রাজি নয় তারা, কেউ কেউ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পলিথিনে নিঃশ্বাস নিতে মগ্ন। তাদের কেউ কেউ সরাসরি বলে, ‘ড্যান্ডি বানাইয়া খাই। এটি খাইলে মনের দুঃখ থাকে না, ক্ষুধাও লাগে না। চাইলে খেয়ে দেখতে পারেন।
’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০-৪০ টাকায় এক ধরনের জুতার গাম বাজারে পাওয়া যায়। এ গাম কেনে এসব শিশুরা। শহরের প্রায় সব জায়গায় দোকানেই এসব গাম পাওয়া যায়। পলিথিনের ব্যাগে আঠালো ওই পদার্থ নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকানো হয়। তারপর পলিথিন থেকে নাক বা মুখ দিয়ে বাতাস টেনে নেয়। পলিথিনে মোড়ানো ওই জিনিসটি গাম দিয়ে তৈরি হয় এক ধরনের নেশাদ্রব্য, যেটি ‘ড্যান্ডি’ নামে পরিচিত।
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের ডগেরপাড় এলাকায় গিয়ে কথা হয় ২ পথশিশুর সঙ্গে। তাদের একজন জুনায়েদ মিয়া মিয়া জানালো, তার মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। আর বাবাকে চেনে না। তার মা-বাবার নাম জানিয়েছে শফিক। সে সারাদিন পারাইরচকে হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লা ফেলার এলাকায় আবর্জনা থেকে কাগজ ও প্লাস্টিক কুড়িয়ে ভাঙ্গাড়ির দোকানে বিক্রি করে ৫০-১০০ টাকা আয় করে। এরপর বিকেলে তারা খোয়াই নদীর পাড় এলাকায় বসে ড্যান্ডি নিয়ে নেশা করে। যেদিন টাকা কম হয় সেদিন গাঁজা সেবন করে বলে জানায় জুনেদ। ড্যান্ডি কীভাবে সংগ্রহ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তার সঙ্গে থাকা শানু মিয়া বলে, ‘আমাদের দেখলে দোকান মালিকদের কেউ-কেউ নাক ছিটকায়। আবার কেউ-কেউ বেশি দাম দিলে বিক্রি করে। আবার অনেক দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের রয়েছে সখ্য। তারাই বিক্রি করে। জুতা সেলাইকারীদের টাকা দিলে তারা এনে দেয়। অনেক সময় তারাও ড্যান্ডি নেশায় শরিক হয়। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৮-১০ বছর বয়সের শিশুরা সাধারণত গাঁজা, সিগারেট ও গাম সেবন করে। ১২-১৮ বছর বয়সীরা ফেনসিডিল ও হেরোইন সেবন করে। মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের কিশোর-যুবকদের নেশার অন্যতম উপকরণ ইয়াবা। তবে অধিকাংশ পথশিশু ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত। হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মাসুক আলী জানান, ‘বিভিন্নভাবে পথশিশুদের ড্যান্ডিতে আসক্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। গাম বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা একটু সচেতন হলে এ মরণঘাতী নেশা থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার পথশিশু। তবুও পুলিশ বসে নেই, এদের দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে।


     এই বিভাগের আরো খবর